জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। গতবছর ১৮ ই সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে [নং- 792/MA/O/C-4/1M-1/2001(pt-1) ] রাজ্য সরকার গুসকরা পৌরসভায় সরকারি প্রশাসকের পরিবর্তে পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য হিসাবে গীতারাণী ঘোষ, রত্না গোস্বামী ও কুশল মুখার্জ্জীকে নিয়োগ পত্র দেন। এই তিন জনের মধ্যে চেয়ারপার্সন হন গীতারাণী ঘোষ। ঐ বছর ২১ শে সেপ্টেম্বর তারা দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গীতা দেবী বলেন - আমাদের প্রথম লক্ষ্য গুসকরায় পানীয় জলের সমস্যা মেটানো। অন্যদিকে কুশল বাবু বলেন - এছাড়াও আমাদের লক্ষ্য বেহাল রাস্তা মেরামত করা, বিভিন্ন ওয়ার্ডের নিকাশী ব্যবস্হার উন্নতি ঘটানো, খারাপ হয়ে যাওয়া পথবাতি মেরামত বা পরিবর্তন করা, নষ্ট হয়ে যাওয়া সিসি ক্যামেরাগুলি পরিবর্তন করা এবং সর্বোপরি পুরবাসীদের সর্বোচ্চ পুর পরিষেবা দেওয়া।
দীর্ঘদিন ধরেই গ্রীষ্মকালে গুসকরায় পানীয় জলের তীব্র সমস্যা দেখা যায়। মনোনীত বর্তমান বোর্ড সমস্যার সমাধানে ইতিমধ্যেই তিনটি নতুন পাম্প বসিয়েছে। শীঘ্রই আরও একটি পাম্প বসানোর কাজ শেষ হবে। তাদের আশা এরফলে গুসকরায় পানীয় জলের সমস্যা অনেকটা মিটবে।
গুসকরার ভৌগোলিক অবস্থান অনেকটা কড়াইয়ের মত। ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেই ৬, ৯, ১২ ও ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের খুবই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাসত্ত্বেও নিকাশী ব্যবস্হার উন্নতির জন্য বর্তমান বোর্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের দাবি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় তিন কিলোমিটার নিকাশী ড্রেন তৈরি করা হয়েছে।
বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলীর দাবি দায়িত্ব নেওয়ার সময় বহু পথবাতি অকেজো ছিল। বেশ কিছু পথবাতি মেরামতি করা হয়েছে। প্রায় ৪৫০ টির মত নতুন পথবাতি লাগানো হয়েছে। পুজোর আগেই আরও ৩০০ টি পথবাতি লাগানো হবে। এরফলে রাতের অন্ধকারে পথচলার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
দায়িত্ব পাওয়ার পর পুরসভার পক্ষ থেকে বেহাল রাস্তা মেরামতির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি ইতিমধ্যেই তারা প্রায় আট কিলোমিটার পিচ রাস্তা এবং প্রায় বারো কিলোমিটার কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করেছে। আরও কয়েকটি ওয়ার্ডের রাস্তা এখনো বেহাল হয়ে আছে। সেগুলি দ্রুত মেরামতের চেষ্টা চলছে।
নতুন প্রশাসক মণ্ডলীর দাবি দায়িত্ব নেওয়ার সময় প্রায় সমস্ত সিসি ক্যামেরা অকেজো ছিল। সীমিত আর্থিক ক্ষমতার জন্য সবগুলো পরিবর্তন সম্ভব না হলেও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুজোর আগে অন্তত পঞ্চাশটি নতুন ক্যামেরা লাগানোর চেষ্টা চলছে।
বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলীর কার্যাবলী সম্পর্কে বিগত বোর্ডের চেয়ারম্যান বুর্ধেন্দু রায় কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও পূর্ত দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলর এবং বর্তমান বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ চ্যাটার্জ্জী আদৌ খুশি নন। তার বক্তব্য - বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলী পুরসভার উন্নতির জন্য প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে নুন্যতম আলোচনা করে না। পুরসভার খারাপ হয়ে যাওয়া পথবাতি পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের সক্রিয়তা চোখে পড়ছেনা। বিগত পুরবোর্ড শহরের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন প্রান্তে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ছিল সেগুলির অধিকাংশ খারাপ হয়ে গেলেও বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলী সেগুলির মেরামতের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ব্যর্থতার জন্য যদিও তিনি সরাসরি বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলীর দিকে আঙুল না তুলে তাদের অনভিজ্ঞতার দিকে আঙুল তুলেছেন।
বিগত বোর্ড সহ চারবারের কাউন্সিলর মল্লিকা চোংদার বললেন - নির্বাচিত বোর্ডের দায়িত্ব শেষ হয় ২০১৮ সালে। পরবর্তী দু'বছর সরকারি প্রশাসক দায়িত্বে ছিল। একদিকে অভিযোগের পাহাড় অন্যদিকে করোনা আবহ - এই দুই কঠিন পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলী দায়িত্ব ভার নেয়। তারপর ছিল বিধানসভা ভোট। তাসত্ত্বেও বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলীর কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়। যেটুকু ঘাটতি আছে আশা করা যায় সেটুকু তারা পূরণ করে ফেলবে। তাদের প্রতি আমার পরামর্শ পুর পরিষেবার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শহরের সৌন্দর্য্যয়নের দিকে নজর দিলে ভাল হয়। তার আরও পরামর্শ মূল শহর থেকে একটু দূরের ওয়ার্ডগুলোর উন্নতির দিকেও যেন নজর দেওয়া হয়।
শহরের একাংশের বক্তব্য - হয়তো কিছু ঘাটতি থেকে গেছে কিন্তু আপদে বিপদে সবসময় তাদের পাশে পেয়েছি। যেসব ওয়ার্ডে জল জমে থাকে সেগুলিতে নিয়মিত স্প্রে করলে মশার অত্যাচার কম হয়।
প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কুশল মুখার্জ্জী বললেন - আমরা যখন দায়িত্ব নিই তখন গোটা দেশের সঙ্গে গুসকরাও করোনার আতঙ্কে জর্জরিত। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল করোনার হাত থেকে গুসকরাবাসীকে রক্ষা করা। কর্মহীন মানুষদের মুখে দু'মুঠো অন্য তুলে দেওয়া। কাজ শুরু করতে না করতেই শুরু হয়ে যায় বিধানসভা ভোট। নিষেধের বেড়াজালে পড়ে প্রায় তিন মাস ধরে উন্নয়নমূলক কাজ কার্যত বন্ধ রাখতে হয়। তারপরও যেটুকু সময় এবং সুযোগ পেয়েছি তাতে আমরা সর্বোচ্চ মানের পুর পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হয়তো আরও উন্নতির অবকাশ ছিল এবং উন্নয়ন একটা চলমান প্রক্রিয়া, তারপরও কতটা পেরেছি তার বিচার সাধারণ মানুষ করবে। তবে আমাদের অভিভাবক অনুব্রত মণ্ডল এবং বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারকে সর্বদা পাশে পাওয়ার জন্য আমাদের কাজ করতে খুবই সুবিধা হয়েছে।