‘এখানে তো পুলিশও নিয়োগ হয় চুক্তিতে,দেশের আর কোথাও এমন হয়না’, নিয়োগ মামলায় প্রধান বিচারপতি
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
কিছু ক্ষেত্রে চুক্তি ভিক্তিক নিয়োগ হতে পারে, তাই বলে সব ক্ষেত্রেই চুক্তি ভিক্তিক নিয়োগ? মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুললো। চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ নিয়ে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার একটি মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, -‘চুক্তিভিত্তিক কর্মী দিয়ে সারা রাজ্য চলছে। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যেতে পারে।কিন্তু তা নিয়মিত ভাবে করা যায় না। এখানে তো পুলিশও নিয়োগ হয় চুক্তিতে। দেশের আর কোথাও এমন হয় না’। আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত মার্চ মাসে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার চুক্তির ভিত্তিতে আদালতের কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। রাজ্য সরকার । ওই বিজ্ঞপ্তিতে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ ওই নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। মঙ্গলবার চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত এই মামলার শুনানিতে রাজ্যকে ভর্ৎসনা প্রধান বিচারপতির। এদিন প্রধান বিচারপতি এজলাসে জানান -‘ সিভিক ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে পুরসভা, সর্বত্র চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী। গোটা দেশে এমনটা কোথাও হয় না। সব সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য এভাবে নিয়োগ বন্ধ করে রাখতে পারে না। চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ কখনও নিয়ম হতে পারে না। চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ হল ব্যতিক্রম। গোটা কর্মশক্তির বেশিরভাগটাই চুক্তিভিত্তিক। জেলা আদালত থেকে শুরু করে বাকি জায়গায় কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন বিচারকেরা। সবাই চুক্তিভিত্তিক হলে ঠিক বা ভুল কাজের দায় কে নেবে? ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন অথচ অবসরের সময়কালীন বেতন ২৬ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা? সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করছেন, কিন্তু বেতন ১৪ হাজার টাকা? কীভাবে সম্ভব?হাইকোর্টে দৈনিক চুক্তিতে কাজ করা পিডব্লিইউডি র কিছু কর্মী আমার কাছে এসেছিলেন নূন্যতম মজুরি চেয়ে চিঠি দিতে। এটা তাঁদের অধিকার। কিন্তু চিঠির কালি শুকোবার আগেই তাঁদের কাজ থেকে বসিয়ে দিয়েছে ঠিকাদার। কেন হবে এরকম?’প্রধান বিচারপতির আরও জানান , -‘আদালত চালানোর ক্ষেত্রেও উপযুক্ত স্থায়ী কর্মী দিয়ে সহযোগিতা করছে না রাজ্য। এই রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে সব কন্ট্রাকচুয়াল নিয়োগ হয়। রাজ্য চুক্তিভিত্তিক কর্মী দিয়ে সব দফতর চালাচ্ছে। এমনকী হাইকোর্টের স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রোপোজাল পাঠানো হলেও, তার কোনও প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না’।চুক্তির ভিত্তিতে আদালতে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে মামলায় রাজ্য সরকার কে কড়া বার্তা দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন আদালত জানিয়ে দিল, -:ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু তা নিয়মিত ভাবে করা যায় না’।অর্থাৎ রাজ্যের এতদিনের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগগুলি অসাংবিধানিক নয়। তবে বার বার তা করা যাবে না। এই রায়ের দরুণ গত ১৩ বছরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে চুক্তি ভিত্তিক কাজের জন্য যে সব কর্মী নিয়োগ হয়েছিল, তা বাতিল হচ্ছে না। যে যেমন চাকরি করছিলেন তা তেমনই করবেন। রাজ্যে এখন প্রায় ৫ লক্ষ চুক্তি ভিত্তিক কর্মী রয়েছেন। এদিন কলকাতা হাইকোর্ট যে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে তাতে তাঁদের চাকরি হারাবার অন্তত কোনও আশঙ্কা নেই বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।গত মার্চ মাসে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় চুক্তির ভিত্তিতে আদালতের কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজ্য সরকার। ওই বিজ্ঞপ্তিতে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ ওই নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত এই মামলার শুনানিতে আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, -‘ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু তা নিয়মিত ভাবে করা যায় না। এখানে তো পুলিশও নিয়োগ হয় চুক্তিতে। দেশের আর কোথাও এমন হয় না’। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর সিঙ্গল বেঞ্চ যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, আপাতত তা বহাল থাকবে। সর্বত্র কী ভাবে চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা যেতে পারে? চুক্তিতে নিয়োগ হলে কর্মীরা দায়িত্বশীল হবেন কী ভাবে? আদালতের কর্মী যদি চুক্তিভিত্তিক হন, তবে একটি ফাইল হারিয়ে গেলে তার দায় তিনি নেবেন কেন? তখন দায়িত্ব কে নেবেন?’ প্রসঙ্গত, রাজ্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ শুরু হয় ২০১১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া অর্থ দফতরের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে। সেই হিসাবেই রাজ্য সরকার তাদের বিভিন্ন দফতরের চুক্তি ভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করে। এদিন যে মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট যে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন, সেই মামলায় মামলাকারীদের দাবি ছিল, -:রাজ্য সরকারের যাবতীয় চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ অসাংবিধানিক। তাই তা বাতিল করা হোক’। যদিও এদিন কলকাতা হাইকোর্ট সেই মর্মে কিছুই বলেনি। রাজ্যে এখন যে ৫ লক্ষ চুক্তি ভিত্তিক কর্মী রয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা, স্বাস্থ্যকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিস ভলান্টিয়ার, অক্সিলিয়ারি দমকলকর্মী তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরাও। চুক্তিতে নিযুক্ত এই কর্মীরা কেউ ৬০, কেউ ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করেন। এখন দেখার কলকাতা হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে রাজ্য সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে?