আদৌ কি বন্ধ হবে সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের ট্রেন যাত্রীদের জীবন যন্ত্রণা!!
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
পূর্ব রেলের হাওড়া বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন হলো সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন। কলকাতা থেকে প্রতিদিন বহু যাত্রী এই লাইনের ট্রেন ধরে 'গুরুদেব' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের শান্তিনিকেতন দর্শনে যান। তীর্থযাত্রীদের আগমন ঘটে তারাপীঠ, কঙ্কালীতলা, ফুল্লরা দেবীর মন্দির সহ একাধিক তীর্থস্থানে। নিত্যযাত্রীরা যাতায়াত করেন বর্ধমানের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। ছাত্রছাত্রীরা যায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। চিকিৎসার জন্য বীরভূম জেলা সহ জেলা সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার বহু রুগী বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যান। সবদিক দিয়েই এই রেল লাইনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
অথচ দীর্ঘদিন ধরেই চরম অবহেলার শিকার হতে হয় এই লাইনের যাত্রীদের। লোকাল ট্রেন তো বটেই মাঝে মাঝে এক্সপ্রেস বা সুপারফাস্ট ট্রেনের যাত্রীরাও এই জীবন যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পায়না। অধিকাংশ দিনই লোকাল সহ প্রায় প্রতিটি ট্রেন দেরিতে চলে। অনেক সময় দেরিতে চলা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য সঠিক সময়ে চলা লোকাল ট্রেনগুলিকে বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘ সময় ধরে অযথা দাঁড় করিয়ে রেখে দেওয়া হয়। যাত্রীদের অভিযোগকে কোনো রকম গুরুত্ব দেওয়া হয়না। ভাবখানা এমন যেন লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা বিনা টিকিটে যাতায়াত করে। রেল দপ্তর দয়া করে এখনো ট্রেন চালু রেখেছে এটাই যথেষ্ট।
লকডাউনের সময় থেকে আপ ও ডাউনে একাধিক ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকালের দিকে বর্ধমান থেকে আপ মালদহ টাউন নামে একটি লোকাল ট্রেন ছাড়ত। সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি পরবর্তী লোকাল ট্রেনটির সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে আমন ও বোরো ধান মরশুমে ট্রেন ধরে আউসগ্রাম ও মঙ্গলকোটের বিভিন্ন এলাকায় কাজে যাওয়া কৃষি শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে গুসকরায় গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়তে আসা ছেলেমেয়েরা প্রচুর সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে। একই সমস্যায় পড়ে বোলপুরের হাটে যাওয়া সব্জি বিক্রেতারা। স্হানীয় যাত্রীদের সমস্যার কথা না ভেবে সকাল ১০ টা নাগাদ বর্ধমান থেকে ছাড়া আর একটি আপ লোকাল ট্রেনকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকাল ৯ টার পর লোকাল ট্রেন না থাকায় দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
ঠিক একইভাবে ডাউনে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারের আগে কোনো লোকাল ট্রেন নাই। যেগুলো চলে সবকটাই এক্সপ্রেস।এলাকাবাসীদের আশা ছিল বিশ্বভারতীর আগে বোলপুর থেকে হয়তো হাওড়া বা শিয়ালদহ পর্যন্ত একটা মেমু ট্রেন দেওয়া হতে পারে যেটা বর্ধমানের পর থেকে গ্যালপিং হিসাবে চলবে। আবার বিকাল ৫ টার পর সেটা হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ছাড়বে। সকালের দিকে শিয়ালদহ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কোনো ট্রেন নাই। যেটি ছিল সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু মানুষ ঠাকুর দর্শন করতে দক্ষিণেশ্বর যেতে চাইলেও সরাসরি ট্রেন না থাকার জন্য যেতে পারেননা। গুসকরায় বেশ কিছু এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজের দাবি করে এর আগে একাধিক বার রেল দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হলেও সুরাহা হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে এরকম হাজারো সমস্যায় জর্জরিত এই লাইনটি। সমস্যার সমাধানে কোনো রাজনৈতিক দলের এটা নিয়ে কোনো রকম ভাবনা চিন্তা আছে বলে মনে হয়না। ট্রেন দেরিতে চলার জন্য মাঝে মাঝে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা রেল অবরোধ করে। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়না।
গুসকরা থেকে অনেক ছোট ব্যবসায়ী সপ্তাহে অন্তত তিনদিন কলকাতা যান। জিনিস কিনে এনে গুসকরা সহ পার্শ্ববর্তী স্থানীয় বাজারের দোকানে তারা সেগুলি সরবরাহ করে। এভাবেই তাদের সংসার চলে। তাদের বক্তব্য - ভোর ৫-৫.৩০ টা নাগাদ যদি ডাউনে গুসকরা থেকে একটি মেমু ট্রেন ছাড়ে তাহলে তাদের কাজের খুব সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে ধীরে সুস্থে জিনিসপত্র কিনে দুটো অতিরিক্ত লাভ করতে পারবে।
অবশ্যই ট্রেনটিকে বোলপুর থেকে ছাড়তে হবে। রামপুরহাট থেকে বোলপুর পর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো একাধিক স্টেশনে দাঁড়ায়। সমস্যা বোলপুরের পরবর্তী স্টেশনের যাত্রীদের।
বর্ধমান আদালতের তরুণ অ্যাডভোকেট ত্রিজিৎ মুখার্জ্জী বললেন - যেভাবে এই লাইনের ট্রেনগুলো অনিয়মিত ভাবে চলাচল করে তাতে আমরা চরম সমস্যায় পড়ে যাই। আশাকরি রেলদপ্তর এই দিকে দ্রুত নজর দেবে।
একই সুর শোনা গেল ওষুধ ব্যবসায়ী সুমন ঘোষ, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী অর্পিনা মুখার্জ্জী, সাঁইথিয়া পৌরসভার কর্মী রাণা চ্যাটার্জ্জী প্রমুখের কণ্ঠে।
কথা হচ্ছিল আউসগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের সঙ্গে। তিনি বললেন- সমস্যাটা আমি জানি। সমস্যার সমাধানে আমি আবার দলের উর্ধ্বতন নেতৃত্বের শরণাপন্ন হব।
রেলদপ্তর তাদের জন্য সদর্থক কিছু করে কিনা তার অপেক্ষায় আছে এই লাইনের হাজার হাজার সাধারণ যাত্রী।