Spread the love

আজ অতুল্য ঘোষের ১২১ তম জন্মবার্ষিকী 

গৌতম তালুকদার,

আজ ২৮ আগষ্ট বুধবার, ২০২৪। বিধান শিশু উদ‍্যানের প্রতিষ্ঠাতা অতুল‍্য ঘোষের ১২১তম জন্মদিবস। তিনি ছিলেন আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় “দাদু”। দাদুর জন্মদিনে বিধান শিশু উদ‍্যানে শ্রদ্ধার্ঘ‍্য নিবেদনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব‍্যক্তিবর্গ। থাকবে গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন। থাকবে উদ‍্যানের সভ‍্যসভ‍্যাদের নাচ,গান,আবৃত্তির অনুষ্ঠান।  খেলাধুলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা নানান ক্রীড়াকৌশল প্রদর্শনের মাধ‍্যমে তারা তাদের দাদু’র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবে। 

  অতুল‍্য ঘোষ ছিলেন এক মহান ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। যিনি অনুভব করেছিলেন শিশুরাই ভবিষ্যৎ-দেশ ও জাতিগঠনের। স্বপ্ন দেখেছিলেন,ওরা খেলবে দৌড়বে ছবি আঁকবে গান-নাচ-আবৃত্তি-অভিনয় শিখবে খোলা আকাশের নীচে। একই সঙ্গে লেখাপড়াও শিখবে বিধান শিশু উদ‍্যানের খোলামেলা পরিবেশে। খুব অল্প বয়সে স্বাধীনতা আন্দোলন ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। ফলে প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন নি। কিন্তু ইংরেজি সাহিত্য সহ বহু বিষয়ে তাঁর পান্ডিত‍্য ছিল সর্বজনবিদিত। উদ‍্যানে ব‍্যবস্থা করেছিলেন নিয়মিত পড়াশোনার। নিজে পড়াতেন ইংরেজি এবং পলিটিক‍্যাল সায়েন্স। এম,এ ক্লাশ পযর্ন্ত। 

  তাঁর এই ভাবনাকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি। নিয়মিত খেলাধুলার বিভাগগুলোর পাশাপাশি নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ক্রিকেট এবং স্কেটিং। অত‍ি সামান্য খরচে বিধান শিশু উদ‍্যান দ্বারা পরিচালিত ATULYA GHOSH INSTITUTE OF LANGUAGES এর মাধ‍্যমে এগারোটি বিদেশী ভাষা শেখানো হয়। এছাড়াও মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ‍্যমিক ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুতি সহায়ক BSU প্রয়াস মক টেস্ট পরিচালনা করা হয় সারা রাজ‍্যজুড়ে অত‍্যন্ত সামান্য খরচে। রাজ‍্যব‍্যাপী এই পরীক্ষায় কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে প্রতি বছর। পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে সহায়ক বই প্রকাশ করা হয় যা মক টেস্টে অংশগ্রহণকারীদের বিনামুল্যে দেওয়া হয়। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিভাগে রাজ‍্য এবং জাতীয় স্তরে সাফল্যের ছাপ রেখে চলেছে। 

  চল্লিশ পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকের সর্বভারতীয় স্তরে অত‍্যন্ত ক্ষমতাশালী এই মানুষটি ক্ষমতার উচ্চ আসন থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে শিশুদের মধ‍্যে মিশে গিয়েছিলেন। তাই অতুল‍্য ঘোষ অমর হয়ে থাকবেন বিধান শিশু উদ‍্যানের মাধ‍্যমে। অতুল‍্য ঘোষকে নিয়ে অনেক কিছু লেখা যায়। দেশের জন‍্য তাঁর ত‍্যাগ থেকে শুরু করে অতি সাধারণ জীবনজাপন যা আজ সকলের কাছে উদাহরণ হতে পারে। তিনি জীবদ্দশাতে তো বটেই, মৃত্যুর পরও তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন এবং নিয়ে চলেছেন।এখনো রাজনৈতিক সৌজন্যের কথা উঠলে কেউ অতুল‍্য ঘোষের নামটি এড়িয়ে যেতে পারেন না। তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। এর চাইতে বড় কিছু পাওয়া আর হতে পারে না। অতুল‍্য ঘোষ-আমাদের দাদু’র সম্পর্কে কিছু লিখতে গেলে যতই চেষ্টা করি আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁকে কখনও সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবো না। তিনি ছিলেন সৌজন্যের প্রতীক। রাজনীতিতে বিরোধীরা বিরোধীতার নামে অতি কদর্য ভাষায় তাঁকে আক্রমণ করেছেন। তিনি কিন্তু কখনো কোনো প্রত‍্যাঘত করেন নি বিরোধীদের। মনে মনে কষ্ট পেতেন। তিনি বলতেন- একজন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারা ব‍্যক্তিকে যখন ল‍্যাংড়া, নুলো বলে ব‍্যঙ্গ করা হয় বা একজন দৃষ্টিহীন মানুষকে যখন “কানা” বলে ব‍্যঙ্গ করা হয় তখন সেই মানুষটির হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয় অনেক চোখওয়ালা মানুষও তা দেখতে পান না। বিধান শিশু উদ‍্যানে অতুল‍্য ঘোষের জন্মদিন ২৮ আগষ্ট দিনটিকে আমরা “সৌজন্য দিবস” হিসেবে পালন করি। সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আমাদের  আবেদন,আসুন সবাই মিলে আমরা এই দাবীকে সমর্থন করি। আজ চতুর্দিকে রাজনৈতিক বিরোধীতার নামে কদর্য ভাষার ব‍্যবহার এবং রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা বন্ধ হোক। ২৮ আগষ্টকে “সৌজন্য দিবস” হিসেবে পালন করে আমরা মনে করতে চাই অতুল‍্য ঘোষ নামে একজন মানুষ এই বাংলায় জন্মেছিলেন, যিনি পনেরো বছর লোকসভার সদস‍্য ছিলেন,পাঁচ বছর সর্বভারতীয় কংগ্রেসের কোষাধ‍্যক্ষ ছিলেন, প্রচুর ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, কিন্তু কখনো ক্ষমতার অপব‍্যবহার করেননি। অত‍্যন্ত সরল সাদামাটা জীবনযাপন করেছিলেন। বছরে দুটি ফতুয়া আর দুটি ধুতি ছাড়া তাঁর অতিরিক্ত পোশাকের প্রয়োজন পরে নি। 

 অতুল‍্য ঘোষকে নিয়ে দু চারটি কথা লিখবো ডাবছি গত কয়েক দিন ধরেই। কিন্তু শুরুটা আর করে উঠতে পারছি। যাইহোক একটু আধটু লেখার চেষ্টা করলাম। যা আসল মানুষটি অত‍্যন্ত ক্ষুদ্র একটি চিত্র। যে বৃহৎ ক‍্যানভাসে অতুল‍্য ঘোষেকে চিত্রিত করে মানুষটিকে কিছুটা তুলে ধরা যেত সে ক্ষমতা আমার নেই। এজন‍্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

  অতুল‍্য ঘোষ চলে যাবার পর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শ্রীমতী সারদা মুখার্জী(অন্ধ্রপ্রদের প্রাক্তন রাজ‍্যপাল) যা বলেছিলেন তার একটি ছোট্ট অংশ তুলে ধরলাম-In more ways than one, Atulya Ghosh personified the indomitable and fearless spirit of the early Congress crusaders whose long and relentless struggle against the British Raj brought freedom to India. The loss of his eye and the spinal injury he suffered during the non-cooperation Movement became permanent physical handicaps.Yet,neither these nor the long years imprisonment could affect his zest for life or his pace of work.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *