অর্ডারশিটে জালিয়াতিতে অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
আইনজীবীর ধারাবাহিক জালিয়াতি কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন এজলাস। বৃহস্পতিবার জালিয়াতিতে অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করলো কলকাতা হাইকোর্ট। একাধারে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ কেও কড়া দাওয়াই দেওয়ার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। হাইকোর্টে জাল নথি দেওয়ার অভিযোগ উঠল অরিন্দম রায় নামে এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে । অভিযুক্ত ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলকে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দেবাংশ বসাক ।এর পাশাপাশি ‘বার কাউন্সিলকে’ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ।হাইকোর্ট সূত্রে প্রকাশ , মুর্শিদাবাদের কান্দি নিবাসী এই আইনজীবীকে এর আগেও হাইকোর্ট জাল নথি জমা দেওয়ার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল। পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে একটি চক্র অনেক লোককে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত্ করছে বলে অভিযোগ উঠেছিল । এরপরে প্রতারণার অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজন কে গ্রেপ্তার করে থাকে পুলিশ । গত বছর ডিসেম্বরে তাদের জামিনের মামলা দাখিল হয় আদালতে । অভিযোগ, মূল মামলা নবগ্রাম থানার হলেও, এই মামলায় ধৃতদের হয়ে এই আইনজীবী সরকারি আইনজীবীর অফিসে ভুল নথি জমা দেন বলে দাবি । নবগ্রাম থানার বদলে মুর্শিদাবাদের অন্য একটি থানার মামলার ( হালকা ধারায় মামলা) নথি জমা দেন ওই আইনজীবী । সেই অনুযায়ী জেলা পুলিশ কেস ডায়েরি পাঠায় আদালতে । সেই নথি দেখে ধৃতদের বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত কম হালকা ধারায় মামলা থাকায় সরকারি আইনজীবী জামিনের আবেদনে আপত্তি করেননি। তবে আদালতে সঠিক নথিই জমা দেননি ওই আইনজীবী । এরফলে, আদালতের কাছে নবগ্রাম মামলার নথি জমা পড়ায় সেই মামলাতেই জামিন হয়ে যায় অভিযুক্তদের। ওই অন্য থানার মামলাটির সূত্র ধরে গোটা ঘটনাটি সামনে আসে । সরকারি আইনজীবীর সন্দেহ হওয়ায় তিনি মূল বিষয়টি আদালতে জানিয়েছিলেন। তারপরে বেশ কয়েকদিন ধরে এই নিয়ে অভিযুক্ত আইনজীবী অরিন্দম রায়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বসাক । গত ১১ মার্চের শুনানিতে আদালত ক্ষুব্ধ হয়ে ওই আইনজীবীকে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দেন । হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বসাক ওই অভিযুক্ত আইনজীবীকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন । তবে ১১ মার্চ শুনানির দ্বিতীয়ার্ধে ফের আদালতে এই মামলা উঠতেই জানা যায় ওই আইনজীবী পালিয়ে গিয়েছেন আদালত চত্বর থেকে । কলকাতা হাইকোর্ট পুলিশকে নির্দেশ দেয় বৃহস্পতিবারের শুনানিতে ওই অভিযুক্ত আইনজীবীকে হাজির করানোর । পুলিশ নির্দেশ কার্যকর করতে না পারলে ব্যর্থতার দায় তাদের নিতে হবে বলেও মন্তব্য করে হাইকোর্ট । ওই আইনজীবীর ডিগ্রি বাতিলের ব্যাপারে ভাবতে আদালত বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি বিভাসরঞ্জন দের ডিভিশন বেঞ্চ। কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, আইনজীবীর এমন জালিয়াতি বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর প্রবণতা। বৃহস্পতিবার জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেল কে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ।জানা গেছে, আইনজীবী অরিন্দম রায় আদালত থেকে জামিন সংক্রান্ত মামলায় জামিন পেতে কৌশলে বিভিন্ন নথি আদালতে পেশ করে থাকেন। একটি মামলাকে সামনে রেখে অন্য একটি মামলায় জামিন পান। এই জালিয়াতির বিষয়টি বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের নজরে আসে। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক মন্তব্য এজলাসে জানান – ‘আইনজীবী আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ এর তরফে উল্লেখ রয়েছে যে,আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য এর আগে বিচারপতি সৌমেন সেন এই আইনজীবীকে সতর্ক করেছিলেন। একই কারণের জন্য বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন।আদালত নির্দেশিকায় উল্লেখ করেছে এরপরেও ওই আইনজীবীর হুঁশ ফেরেনি। তাই জালিয়াতির দায়ে অরিন্দম রায়ের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রার জেনারেল ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অরিন্দম রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর এই কাজের জন্য তদন্ত করবে এবং বার কাউন্সিল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’।বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের তরফে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান আনসার মন্ডল জানিয়েছেন – ” আমরা আদালতের আদেশনামা অনুযায়ী তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করবো”।