অনুব্রতের সিবিআইয়ের মামলায় পুনরায় হলফনামা তলব ডিভিশন বেঞ্চের, অনুব্রতের আবেদন খারিজ সিঙ্গেল বেঞ্চের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দুটি পৃথক বেঞ্চে বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলের দাখিল দুটি মামলার শুনানি চলে।একটি চলে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআইয়ের মামলায় জামিন বিষয়ক শুনানি, অপরটি বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর সিঙ্গেল বেঞ্চে ইডির এফআইআর খারিজের শুনানি। সিবিআইয়ের মামলায় ডিভিশন বেঞ্চ উভয়পক্ষের পুনরায় হলফনামা তলব করেছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। অপরদিকে ইডির মামলায় সিঙ্গেল বেঞ্চে শুনানি চললেও তার রায়দান স্থগিত রাখা হয়ছিল,পরে অনুব্রতের আবেদন খারিজ করা হয় আবেদন বলে জানা গেছে। জেল হেফাজতে থাকা বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল যে ‘প্রভাবশালী’, সেই তত্ত্ব আগেও গরু পাচার মামলার শুনানিতে উঠে এসেছিল। এবার সেই তত্ত্বেই সিলমোহর দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলায় অনুব্রতর জামিনের আর্জি জানিয়ে যে মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে , সেই মামলার শুনানিতেই এদিন অনুব্রত কে ‘প্রভাবশালী’ বলে উল্লেখ করেছেন খোদ বিচারপতি।এরফলে জামিন পাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে উঠলো বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই প্রসঙ্গে নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছে আসা হুমকি চিঠির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে বিচারপতি। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি বি অজয় কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চে ছিল মামলার শুনানি। অনুব্রতর পক্ষে সওয়াল করেন সুপ্রিম কোর্টের জাঁদরেল আইনজীবী কপিল সিব্বল।এদিন কপিল সিব্বল এজলাসে জানান -‘ গরু পাচার মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেয়েছেন অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হক, জামিন পেয়েছেন সতীশ কুমারও। অনুব্রতর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না?’ কপিল সিব্বল আরও বলেন -‘ চার মাস জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন অনুব্রত, গত ৬ অক্টোবর চার্জিশিটও দেওয়া হয়েছে’। অনুব্রতের আইনজীবীর সওয়াল শুনে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মন্তব্য করেন,-‘ যাঁরা জামিন পেয়েছেন, তাঁদের থেকে মামলাকারী (অনুব্রত) অনেক বেশি প্রভাবশালী, এটা বাস্তব’।এর সাথে একজন বিচারককে হুমকি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন বিচারপতি । বিচারপতি বলেন, -‘বিচারক নিজেই হুমকি পেলে সেটা আদালত কী করে তুচ্ছ করে দেখবে?’ এদিন ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই জানিয়েছে, -‘ মনোজ সানা এই মামলার একজন অন্যতম সাক্ষী, যিনি এই মুহূর্তে নিখোঁজ’ । তদন্তের এই সময়ে সাক্ষীদের বক্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। একই সঙ্গে লালন শেখের মৃত্যু নিয়ে সিবিআইকে তীব্র ভর্ত্সনা করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী।হুমকি চিঠি প্রসঙ্গে আইনজীবী সিব্বল বলেন,- ‘এগুলো কেস ডায়েরিতে লেখা হলেও প্রমাণিত নয়। প্রমাণ হলে জামিন দেবেন না। অনুব্রত মূল চক্রী নয়। এনামুল হক মূল চক্রী। এখনও পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি অনুব্রতর বিরুদ্ধে।’ আগামী ২৩ ডিসেম্বর ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় নথি পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ । প্রসঙ্গত, পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সিবিআই আদালতে চলছে গরু পাচার সংক্রান্ত মামলা। শুনানি চলাকালীন হুমকি চিঠি এসেছিল সিবিআই এজলাসের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর কাছে। অনুব্রতকে আদালতে পেশ করার ঠিক আগেই সেই চিঠি এসেছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘অনুব্রতকে জামিন না দেওয়া হলে এনডিপিএস তথা মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বিচারক ও তাঁর পরিবারকে।’ চিঠির কথা কলকাতা হাইকোর্টেও জানিয়েছিলেন ওই বিচারক। ডিভিশন বেঞ্চে এদিন শুনানি পর্বে সিবিআই বগটুই মামলার অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে থাকে। হেফাজতে কীভাবে মৃত্যু হল? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। সিবিআই জানায়, – ‘ মূল অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যুর পর ওই মামলার আইও-দের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে’। বিচারপতি ভর্ত্সনার সুরে বলেন, – ‘একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে সিবিআই হেফাজতে। আত্মহত্যা বলছেন। সেটা কি স্বাভাবিক মৃত্যু? যে কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে এফআইআর জরুরি। বিচারাধীন বন্দির ওপর নজর রাখা আপনার কর্তব্য নয়?’ অপরদিকে গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের বিরুদ্ধে ইডি যে ইসিআর করেছিল তা খারিজের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখলেন সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী।গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে তত্পর ইডি। তা নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা চলছে, মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টেও । কলকাতা হাইকোর্টে ইডির মামলা খারিজের আর্জি জানান অনুব্রত মন্ডল । সেই মামলাতেই এদিন রায়দান স্থগিত রাখলেন বিচারপতি।এই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে গত শুনানিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি কে নিজেদের অবস্থান জানাতে বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে ইডি তখন জানিয়েছিল তারা এই মামলার প্রতিলিপি হাতে পায়নি। তাই, নিজেদের অবস্থান জানাতে আরও কিছুটা সময় চেয়েছিল আদালতের কাছে । তারপর এদিন এই মামলার শুনানি হয়। রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছিল,পরে অনুব্রতের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী।