Spread the love

ছেঁটে ফেলে ছোট করা হলো দলের কোর কমিটি

অনুব্রতের  মুক্তির অপেক্ষায় লোকসভা ভোটের বার্তা দলনেত্রী মমতার

        খায়রুল  আনাম

একবার নয়, বার বার।  একদা সিপিএমের বাম দুর্গ হিসেবে পরিচিত বীরভূম থেকে বাম তথা সিপিএমকে সমূল উচ্ছেদ করে ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত,  বিধানসভা ও লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের  ঘাস ফুল ফোটাতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় এবং বলতে গেলে একক সাংগঠনিক বাহুবল হিসেবে থেকেছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।  দিদি মমতার আদরের কেষ্ট।  কিন্তু হিসেবে ওলট-পালট ঘটে যায় গোরু পাচার মামলায়    অনুব্রত মণ্ডল ২০২২ সালের ১১ আগস্ট সিবিআই তাঁর বোলপুরের বাড়ি থেকে  গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই। পরবর্তীতে গোরু পাচার মামলার  তদন্তের  সাথে যুক্ত হয় ইডি।  দীর্ঘ  আইনী লড়াইয়ের পরে অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির তিহাড় জেলে। তার পরেও দীর্ঘদিন অনুব্রত মণ্ডলকে দলের জেলা সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জেলায় দল পরিচালনার জন্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে বিগত বছরের জানুয়ারিতে আমার কুটিরের রাঙাবিতানে বসে ৯ সদস্যের কোর কমিটি গঠন করে দেন।  ওই বৈঠকেই দলের বৃত্তের বাইরে থাকা নানুরের শেখ ফায়েজুল হক ওরফে শেখ কাজলকে এই কোর কমিটিতে নিয়ে আসা হয়।  বিগত জেলা পরিষদের ভোটে বিদায়ী জেলা পরিষদের পূর্ত্ত  কর্মাধ্যক্ষ অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ  কেরিম খানকে সরিয়ে শেখ কাজলকে তাঁরই আসনে প্রার্থী করা হয় এবং তিনি মজয়লভও করেন। তারপরই শেখ কাজলকে জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনে বসানো হয়। এরপরই দলের অভ্যন্তরে অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের সঙ্গে শেখ কাজলের টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় অনুব্রত মণ্ডলের ছবিও মুছে ফেলা হয়। দলের অন্যতম নেতা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম একাধিক বার জেলায় এসেও এই দ্বন্দ্ব থেকে দলকে বের করে আনতে পারেননি। বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ও শেখ কাজলের দিকে ঝুঁকে পড়েন বলে দলের একাংশ বলতে  শুরু  করেন।

    কিন্তু এবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই  লোকসভা ভোটের আগে দলের এই অভ্যন্তরীন সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ  করলেন।  মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর বাসভবনে  বীরভূমে দলের ১০ জন বিধায়ক,  দুই সাংসদ শতাব্দী রায় ও অসিত মাল,  দলের মূল ও শাখা সংগঠনের সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পৌরসভার পৌর প্রধান ও শহর সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে বসে স্পষ্ট করে দিলেন দলের অবস্থান।  জেলায় দল পরিচালনার জন্য  ৯ সদস্যের কোর কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলা হলো শেখ কাজলকে। দুই সাংসদ শতাব্দী রায় ও অসিত মালকেও  সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কোর কমিটি থেকে। এরা দু’জনেই পুনরায় লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে পারেন ধরে নিয়েই তাঁদের সরিয়ে রাখা হলো বলে মনে করা হচ্ছে। জেলা কোর কমিটিতে রইলেন বোলপুরের বিধায়ক মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ,  রামপুরহাটের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি  স্পিকার ড. আশিস  বন্দ্যোপাধ্যায়,  সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী,  লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ  সিংহ ও বোলপুরের সুদীপ্ত ঘোষ।  লোকসভা ভোটের আগে যা যথেষ্ট  তাৎপর্যপূর্ণ  বলেই মনে করা হচ্ছে।  এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেখ কাজলের আচরণে যে সন্তুষ্ট নন, তা স্পষ্ট  করে দিয়ে বলেছেন,  তুমি কতো বড় নেতা হয়েছো যে দল ও সরকার এক করে দিচ্ছো?   জেলা আমি দেখে নেব। তুমি জেলা পরিষদ দেখ। এদিন শতাব্দী রায়ও ঢোক গিলে বলেছেন, অনুব্রত মণ্ডল  তো আমাদের মধ্যেই আছেন। উনি জেল থেকে বেরিয়ে এসে দলের হাল ধরবেন। ইতিমধ্যেই দিল্লি আদালতও অনুব্রত মণ্ডলকে বিনা বিচারে আটকে রাখা নিয়ে অসন্তোষ  প্রকাশ করে এক মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে বিচার প্রক্রিয়া  শুরু করার ইঙ্গিতও দিয়েছে।  তারমধ্যেই এদিনের বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডলের প্রতি যে আস্থা দেখানো হয়েছে তা যথেষ্ট  ইঙ্গিতপূর্ণ  বলেই মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *